[ অনলাইন ] 26/04/2024
 
উৎসে কর থেকে ২২৬৯০ কোটি টাকা আদায় করবে এনবিআর
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর আদায় করতে হবে। আর এ লক্ষ্য অর্জনের সহজ উপায় হিসেবে এনবিআর মূলত ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স (টিডিএস) বা উৎসে কর কর্তনের দিকে নজর দিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কর আদায়ের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এনবিআরের আয়কর বিভাগ। ওই রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বাড়তি রাজস্বের ২২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশই টিডিএস হিসেবে আদায় করতে চায় সরকারি সংস্থাটি। 

এর মধ্যে কর ছাড় সীমিত করে ১০০০ কোটি টাকা, কর কমপ্লায়েন্স ইমপ্রæভ করে ৫০০ কোটি টাকা, কর দাতাদের নতুন আউটরিচের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ব্যাপারগুলো একীভূতকরণের মাধ্যমে আরো ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স বিভাগ। এছাড়া উইথহোল্ডিং রিটার্নের অডিট, অনলাইন করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমাদান, উন্নত অডিট ব্যবস্থা এবং করদাতাদের জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত আরো ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চাইছে এনবিআর। তবে সহজ পন্থা হিসেবে টিডিএস থেকে বাড়তি কর আদায় করার এ পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, এর ফলে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের চাপ আরো বাড়তে পারে। এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, টিডিএস আদায় করা সহজ। কারণ রেট বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আর কিছু ফাইন বাড়িয়ে দিয়ে এ খাত থেকে বাড়তি আদায় করা যায়।

কিন্তু আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে এ পন্থা অবলম্বন করা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না। তিনি আরো বলেন, এতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ আরো বাড়তে পারে। এর চেয়ে এনবিআরের উচিত হবে নতুন করদাতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পথ তৈরি করা। এনবিআর ৫০টির বেশি খাত থেকে টিডিএস হিসেবে আয়কর আদায় করে থাকে, যা মোট আয়করের প্রায় ৬০ শতাংশ। এনবিআর সূত্র জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআর টিডিএস হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার আয়কর আদায় করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এই উপায়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে চায়। আর নতুন যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে আগামী অর্থবছরে কেবল টিডিএস হিসেবেই আদায় হবে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। সেক্ষেত্রে মোট রাজস্বে টিডিএসের অংশ আরো বেড়ে ৬৫ শতাংশ হবে। এদিকে গত ২৪ এপ্রিল আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসেছে। 

মূলত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ অনুমোদনের আগে বাংলাদেশকে দেয়া সময়াবদ্ধ শর্তগুলো কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ, তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দল। এর অংশ হিসেবে আগামী ২৮ এপ্রিল ইনকাম ট্যাক্স ও ভ্যাট উইংইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠক করবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী বছরের ট্যাক্স আদায়ের পরিকল্পনা ২৮ এপ্রিল তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে যে প্রোগাম বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতি বছর ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও (জিডিপিতে করের অংশ) ০.৫ শতাংশ হারে বাড়ানো। তবে প্রথম বছর এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এর বাইরে আরো যেসব শর্ত ছিল, তার মধ্যে মোটা দাগে ছয়টি শর্ত রয়েছে।

 এর মধ্যে তিনটি শর্ত চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো হলো- এনবিআরের কাস্টমস এবং ভ্যাট শাখায় কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা, ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ইমপ্রæভমেন্ট প্ল্যান তৈরি ও গ্রহণ করা এবং মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কৌশল গ্রহণ করা। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠন করা হলেও তার কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান হয়নি। অন্যদিকে বাকি দুটির কার্যক্রমও এখনো দৃশ্যমান নয়। তবে এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে- মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল (মিডিয়াম অ্যান্ড লং-টার্ম রেভেনিউ স্ট্র্যাটেজি এমএলটিআরএস) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।