[ পাতা ৫ ] 01/07/2025 |
 |
|
|
ঘাটতি পূরণে সরকার এক দিনেই ধার নিয়েছে ১১৭৯৪ কোটি টাকা
|
|
|
চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বাজেট ঘাটতি আংশিকভাবে পূরণ করতে সরকার মাত্র এক দিনে ট্রেজারি বিল (টি বিল) ইস্যুর মাধ্যমে ১১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। রবিবার তিন ধরনের ট্রেজারি বিল নিলামের মাধ্যমে এই বিপুল অঙ্কের ঋণ সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম ফলাফলের তথ্য অনুযায়ী, এই দিন সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তা আগে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার কোটি টাকার তুলনায় অনেক বেশি। একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ নিলাম। ঘাটতি মেটাতে সরকার বড় পরিসরে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে।’
সুদের হারে মিশ্র প্রবণতা : নিলামের দিনে ট্রেজারি বিলের সুদহারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের অতিরিক্ত তারল্য ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি সিকিউরিটিজে রাখতে আগ্রহী ছিল। ওইদিন ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১২ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশে। তবে ৯১ দিনের বিলের সুদহার ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ অপরিবর্তিত ছিল। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ট্রেজারি বিলের সুদহারের এই প্রবণতা আগামী দিনগুলোতেও বজায় থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও সরকারের ঋণসীমা ছাড়িয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষপ্রান্তে এসে সরকারের ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। জুন মাসে সরকার সাধারণত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে তুলনামূলক বেশি ঋণ নেয়। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েজ-অ্যান্ড-মিনস অ্যাডভান্স এবং ওভারড্রাফট সুবিধার আওতায় সরকারের নেওয়া ঋণ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওয়েজ-অ্যান্ড-মিনস অ্যাডভান্সের আওতায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং ওভার ড্রাফট সুবিধার আওতায় আরও ১২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত সিকিউরিটি ইস্যু ছাড়াই ঋণ নিতে পারে। তবে বর্তমানে এই সীমার ঊর্ধ্বে চলে গেছে সরকারের ঋণগ্রহণ।
ঋণনির্ভরতা বাড়লে ঝুঁকিও বাড়ে : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের প্রবণতা নতুন নয়। তবে গত বছর তার মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকার যদি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধার নিয়ে ঘাটতি পূরণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করে, তাহলে সেটা সামষ্টিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও ঋণখেলাপি প্রবণতা বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের এখন প্রয়োজন ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দেখানো এবং রাজস্ব আদায় কাঠামোতে কার্যকর সংস্কার আনা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঋণনির্ভরতাকে সীমিত রাখা যায়।
গত অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা কমিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল মূল বাজেটে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন সময় বলেছেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করব না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে।’
তিনি আরও জানান, বাজেটে বড় ঘাটতি থাকবে না এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ গ্রহণ থেকেও বিরত থাকবে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাজেটের আকার বেড়েছে, যদিও রাজস্ব আয় খুব একটা বাড়েনি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের জুনে ছিল ৭ লাখ ২২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। |
|