[ অনলাইন ] 04/07/2025 |
 |
|
|
মার্চে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৭,১৮৯ কোটি টাকা
|
|
|
চলতি বছরের (২০২৫) মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা খাতটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা—যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
অর্থাৎ, তিন মাসে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এনবিএফআই খাতে সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং [বকেয়া ঋণ] বাড়লেও তার চেয়েও বেশি হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। অর্থাৎ, আগের বিতরণ করা ঋণের সঙ্গে নতুন বিতরণ করা ঋণও এখন খেলাপি তালিকায় চলে যাচ্ছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এনবিএফআই খাতে ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং বেড়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, যেখানে একই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর ফলে বছরওয়ারি হিসাবে খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ পয়েন্ট।
শুধু তিন মাসেই, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে খাতটির মোট ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, অথচ খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইনান্স কোম্পানির (আইআইডিএফসি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, 'এনবিএফআই খাতে আগের যে সব ওভারডিউ ঋণ [বিলম্বিত ঋণ] ছিল, সেগুলোই ধীরে ধীরে ক্লাসিফায়েড বা খেলাপি ঋণের তালিকায় ঢুকছে। নতুনভাবে তেমন ঋণ দেওয়া হচ্ছে না, তাই নতুন ঋণ থেকে খেলাপির হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টির খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের বেশি রয়েছে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, এনবিএফআই খাতের সম্পদের গুণগত মান ও লাভজনকতা আরও কমে গেছে।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে তাদের মোট সম্পদ ১ দশমিক ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি, বার্ষিকায়িত রিটার্ন অন অ্যাসেটস (আরওএ) নেমে এসেছে ঋনাত্বক ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ঋণাত্বক ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিএফআই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ফলে তারা নতুন করে ডিপোজিট [আমানত] সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি পূর্ববর্তী সময়ে দীর্ঘ মেয়াদে রিশিডিউল [পুনঃনির্ধারিত] করা ঋণগুলো এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।'
এনবিএফআই খাত বর্তমানে লিকুইডিটি [তারল্য] সংকটে ভুগছে বলে মন্তব্য করে গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, 'এখন নতুন করে আগের মতো ডিপোজিট পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলোও আমাদের আগের মতো তারল্য সহায়তা দিচ্ছে না। সবমিলিয়ে চলমান তারল্য সংকটের কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না।' |
|