[ অনলাইন ] 06/07/2025
 
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪৬৪০৭ কোটি টাকা, শীর্ষে জনতা
চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এটি দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা ও নিয়মিত পারফরম্যান্সের উন্নয়নে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ) চালু করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এর আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে বছরের পর বছর চুক্তি করলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, একক ব্যাংক হিসেবে দেশের ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৮৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের চার ভাগের তিন ভাগই খেলাপি। গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০২৪-২৫)’-তে ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৬ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল।

জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বর্তমানে খেলাপি ঋণে জর্জরিত জনতা ব্যাংক। মাত্র দশটি শিল্প গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির অর্ধেকের বেশি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকের তালিকায় বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ উল্লেখযোগ্য বলে জানা যায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ

রাজধানী থেকে জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক নিখোঁজ
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ২০২৪ সালের জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা (খেলাপির হার ৩০.৫৯ শতাংশ)।

খেলাপি ঋণের পরিমাণগত দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশের সর্ব বৃহৎ সোনালী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ২১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০২৪-২৫)‘-এ ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৫১ কোটি ৫১ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল। বিগত সরকারের আমলে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল সোনালী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে রয়েছে- হলমার্ক গ্রুপের টিঅ্যন্ড ব্রাদার্স ও হলমার্ক গ্রুপ, রূপসী গ্রুপ, মডার্ন স্টিল, তাইপেই বাংলা ফেব্রিকস, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস, রহমান গ্রুপ।

ঋণের অঙ্কে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪৬৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটির প্রভাবশালী খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে স্কাই ক্যাপিটাল, বদর স্পিনিং ও ব্লু প্লানেট গ্রুপ রয়েছে বলে জানা যায়।

খেলাপি ঋণের হারের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় জনতা ব্যাংকের পরেই বেসিক ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশই খেলাপি। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫৫ কোটি ১১ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৬৩.৩৩ শতাংশ)। বেসিক ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আমাদের বাড়ি, নিউ ঢাকা সিটি ডেভেলপমেন্ট, এমারেল্ড অটো ব্রিকস, আলী গ্রুপ ইত্যাদি

অবশিষ্ট বিডিবিএল ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ টাকার অঙ্কে খুব বেশি না হলেও ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৪৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ঋণই খেলাপি। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি স্থিতি ছিল ৯৮০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪৩ কোটি টাকা।