[ অনলাইন ] 08/07/2025
 
ব্যাংক পরিচালকদের ৫০ শতাংশই হবে স্বতন্ত্র: গভর্নর
ব্যাংক পর্ষদে ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকাটা বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে।

কোনো ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক বসাতে গেলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন গভর্নর।

তিনি বলছেন, প্যানেলের বাইরের কাউকে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন জানাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ফিট অ্যান্ড প্রপার’ মনে করলে পরে সেই ব্যক্তিকে প্যানেলে যুক্ত করবে।

ব্যাংক খাতে ‘ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি’ (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

গভর্নর বলেন, “ঝুঁকিভিত্তিক তদারকির আওতায় ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে বর্তমানে পাইলটিং কার্যক্রম চলছে। পরে বাকি ৪১টি ব্যাংকও এর আওতায় আনা হবে।”

তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন না এলে এ তদারকি ব্যবস্থা ফল দেবে না বলে মনে করেন গভর্নর।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তাই বোর্ডে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন করা হচ্ছে।

“পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক, উভয় ক্ষেত্রেই যোগ্যতা যাচাই করে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যাংক খাত তদারকিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি’ (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পর্যায়ক্রমে এ নতুন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে।

ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি চালু করা হয়েছে এবং তা ইতিবাচক ফল দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই নতুন তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, বাজার, পরিচালনা, আইনি ও কৌশলগত ঝুঁকি আরও সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। সেই ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপও নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকেও নানা বিষয়ে পরিবর্তন আসছে তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একাধিক তদারকি বিভাগ নতুনভাবে গঠন করা হবে। এর মধ্যে তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধবিষয়ক ঝুঁকি তদারকি বিভাগও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তদারকি তথ্যনির্ভর করতে তৈরি করা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। একটি কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের যেকোনো ব্যাংকের ঝুঁকির চিত্র সহজে বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে গভর্নর বলেন, “রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আগের মতো ওইভাবে যদি না হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যাংক খাতের ঝুঁকি শনাক্ত করা যাবে।

“আগে কি এসব আইডেন্টিফাই (শনাক্ত) করতে পারেনি? আমরা করেছি কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।”

তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে নানা রকম অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, তবে সংশোধনের ইচ্ছা ছিল না। তাই সেই পরিবর্তনটি ভবিষ্যতে রাজনীতিকদের আনতে হবে।

“দেশ চালাবে সরকার। তাই আমরা আশা করব, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার নিজের মতো কাজ করতে দেবে।”

ব্যাংক খাতের সংস্কারকে ‘চলমান প্রক্রিয়া’ হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ব্যাংকিং বা আর্থিক খাত স্থবির নয়, বরং এটা চলমান প্রক্রিয়া। তাই আমাদের এতে কাজ করে যেতে হবে। সংস্কার শুরু কবে হয়েছে, তা জানি না, শেষ কবে হবে তাও জানি না। তবে আমরা চলতে থাকব।

“একটা সংস্কার শেষ হবে, আরেকটা আসবে। কোথা থেকে কোন ঝুঁকি উৎপত্তি হবে, সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে নতুন নতুন ঝুঁকি আসবে। এটা আমাদের ট্যাকেল করার মতো সক্ষমতাও রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, “অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা করলে রাজনীতিকদের কী পরিণতি হয় তা দেখলেন। এটা শিক্ষণীয় একটা বিষয় যে, পরিণতি ভালো হয় না। দেশের জন্যও ভালো নয়, তাদের (রাজনীতিবিদ) জন্যও ভালো নয়। তারা কি দেশ থেকে নির্বাসনে যেতে চায়? তা তো চায় না।“

সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গও আসে।

গভর্নর বলেন, “আমি জানি না জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে কিনা। এখন বাজার স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে চালের দাম বেশি। কেন এ পণ্যটির দাম বেশি, তা আমার জানা নেই।”