[ অনলাইন ] 13/07/2025
 
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ না পেয়ে তাদের ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না হলে তারা বিনিয়োগ ফেরত চায়— না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গ্রুপটি।

গত ৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অভিযোগ ও দাবি জানিয়েছে আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান জোসেফিন সিভারেতনাম। চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের কাছেও।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৫৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। এই শেয়ার ক্রয়ের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে দায়িত্বমুক্তির নিশ্চয়তা পেয়েই ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিল তারা। কিন্তু পরে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পুরোনো শেয়ারহোল্ডাররা একাধিক মামলা করলে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন আটকে যায়। ফলে ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে দেয় এবং একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীর কোনো মতামত বা কর্তৃত্ব আর অবশিষ্ট থাকেনি।

আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন পদক্ষেপ শুধু চুক্তি লঙ্ঘন নয়, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রেও নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।’

চিঠিতে তারা আরও উল্লেখ করেছে, তাদের নিয়োগ দেওয়া নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক না দিয়ে উল্টো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে মালিকানার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার ফলে কোনও নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী ব্যাংকটিতে আগ্রহ দেখাবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, "আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ সুনির্দিষ্ট আগ্রহ নিয়ে ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন রাষ্ট্রীয় সহায়তায় আইনি সমাধান হলে ভালো।"

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান সংকট এবং মালিকানা জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়— দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে।