[ অনলাইন (সম্পাদকীয় ) ] 19/07/2025
 
লুটপাটে ধুঁকছে ব্যাংক খাত
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এমনকি সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে পরিচালকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লুটপাট হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তরা এসব করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সবল ব্যাংক দখল করেও লুটপাট চালিয়েছে। লুটের টাকা পাচার করেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। একই সময়ে মূলধন ঘাটতি ও প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। তারল্য সংকটও বেড়েছে। সব মিলে ব্যাংক খাত দুর্বল হয়েছে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন অর্থনীতির গতি কমে গেছে। তারল্য সংকটের ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের জোগান হ্রাস পেয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি সবল ব্যাংক খাত পেয়েছিল। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি সরকার ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনে। তাদের সময়ে দু-একটি ছাড়া বড় ধরনের কোনো লুটের ঘটনা ঘটেনি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেও ব্যাংক খাত সংস্কার করে। ফলে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত পায়। কিন্তু ক্ষমতার শুরু থেকেই তারা ব্যাংক খাতে লুটপাট শুরু করে। লুটের মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়। এতে ব্যাংক খাত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়ে। লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোর এলসি গ্রহণে বিদেশি ব্যাংকগুলো অনীহা প্রকাশ করে। এতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে গ্যারান্টি দিয়ে এলসি করতে হয়েছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের খরচও বেড়েছে, যার দায় ঘুরেফিরে পড়েছে ভোক্তার কাঁধে।

বর্তমানে যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলছেন। অর্থনীতিবিদরাও অনেক দিন ধরেই ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলে আসছেন। সংস্কারের অভাবে এ খাতের অবস্থা দিন দিন সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কাজেই ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন। এ সংস্কার অবকাঠামোগত ও কার্যক্রমগত হতে পারে। তবে সংস্কার কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হতে হবে ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও দূরীকরণের মাধ্যমে এ খাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা, যাতে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খাতটি যথাযথ অবদান রাখতে পারে।

উল্লেখ্য, ঋণের নামে সীমাহীন লুটপাটের মতো অন্য অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে এ খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব। বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ক্রমেই ভেঙে পড়তে দেখেছি আমরা। এ নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কার্যত কিছুই হয়নি। সত্যি কথা বলতে, এ খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের বিষয়টিতে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যে কোনো খাতের সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। ব্যাংক খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। মনে রাখতে হবে, শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে সংস্কার করা হলেই এ খাতের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে না। আগামীতে রাজনৈতিক সরকার গঠনের পরও ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।